জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে তা এক নজরে দেখে নিন?
জন্ম নিবন্ধন করার বিস্তারিত প্রক্রিয়া
জন্ম নিবন্ধন হল বাংলাদেশ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক সেবা, যা প্রতিটি নাগরিকের আইনি পরিচয় নিশ্চিত করে। এটি শিশুর নাগরিকত্ব, শিক্ষা, চিকিৎসা ও অন্যান্য সরকারি সেবা গ্রহণের জন্য আবশ্যক।
কী কী প্রয়োজন হবে?
১. আবশ্যক কাগজপত্র:
জন্ম নিবন্ধনের জন্য নির্দিষ্ট কিছু কাগজপত্র লাগবে, যা নির্ভর করে জন্মের সময় ও অবস্থার ওপর।
ক) নবজাতক বা ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর জন্য:
- জন্মের প্রমাণপত্র:
- হাসপাতাল/ক্লিনিক থেকে দেওয়া জন্ম সনদ (যদি হাসপাতালে জন্ম হয়ে থাকে)।
- ধাত্রী বা স্থানীয় কাউন্সিলরের প্রত্যয়নপত্র (যদি বাড়িতে জন্ম হয়ে থাকে)।
- পিতা ও মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা জন্ম নিবন্ধন সনদ।
- বিবাহ নিবন্ধন সনদ (যদি থাকে)।
- ঠিকানার প্রমাণপত্র:
- বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, বা ওয়ার্ড কাউন্সিলরের প্রত্যয়নপত্র।
- পাসপোর্টের কপি (যদি থাকে)।
খ) ৫ বছরের বেশি বয়স হলে (পূর্বে জন্ম নিবন্ধন না থাকলে):
- উপরোক্ত সব কাগজপত্রের সঙ্গে বিদ্যালয়ের সনদপত্র অথবা টিকাদান কার্ড সংযুক্ত করতে হতে পারে।
জন্ম নিবন্ধন করার ধাপসমূহ
১. অনলাইনে আবেদন করা (ঐচ্ছিক)
বর্তমানে জন্ম নিবন্ধনের জন্য bdris.gov.bd ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে আবেদন করা যায়। অনলাইনে আবেদন করলে প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করে নিকটস্থ ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনে গিয়ে কাগজপত্র জমা দিতে হয়।
২. স্থানীয় সরকার অফিসে আবেদন জমা দেওয়া
সরাসরি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন বা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন জমা দিতে হয়।
৩. নিবন্ধন ফি প্রদান করা
- জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধন করলে: বিনামূল্যে।
- ৪৫ দিনের পর নিবন্ধন করলে: নির্ধারিত ফি দিতে হয় (সাধারণত ২৫-৫০ টাকা)।
- বয়স বেশি হলে (৫ বছর বা তার বেশি): দেরিতে জন্ম নিবন্ধনের জন্য অতিরিক্ত ফি বা অনুমোদন লাগতে পারে।
৪. কর্তৃপক্ষ কর্তৃক যাচাই ও অনুমোদন
জমা দেওয়া কাগজপত্র যাচাই করে স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ নিবন্ধন সম্পন্ন করে। ভুল থাকলে সংশোধনের জন্য আবেদনকারীকে জানানো হয়।
৫. জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করা
অনুমোদন হয়ে গেলে জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করা যায়। এটি অনলাইনে ডাউনলোড বা অফিস থেকে প্রিন্ট কপি সংগ্রহ করা যায়।
জন্ম নিবন্ধন যাচাই ও সংশোধন
১. জন্ম নিবন্ধন যাচাই করা
জন্ম নিবন্ধন সফলভাবে সম্পন্ন হলে সেটি bdris.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে যাচাই করা যায়।
২. তথ্য সংশোধন করা
যদি জন্ম নিবন্ধনে ভুল তথ্য থাকে (যেমন নামের বানান ভুল, বয়সের সমস্যা), তাহলে সংশ্লিষ্ট পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ বা সিটি কর্পোরেশন অফিসে আবেদন করতে হয়।
সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
- ভুল তথ্য সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় দলিল (যেমন স্কুল সনদ, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র)।
- সংশোধনের কারণ উল্লেখ করে আবেদনপত্র।
জন্ম নিবন্ধনের সুবিধাসমূহ
✅ জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) পেতে সাহায্য করে।
✅ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণে প্রয়োজন।
✅ পাসপোর্ট তৈরি করতে বাধ্যতামূলক।
✅ জমি বা সম্পত্তি সংক্রান্ত কাজে প্রয়োজন হয়।
✅ সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেতে সহায়ক।
জন্ম নিবন্ধনের জন্য কোথায় যোগাযোগ করবেন?
✔ ইউনিয়ন পরিষদ / পৌরসভা / সিটি কর্পোরেশন অফিস।
✔ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়।
✔ bdris.gov.bd (বাংলাদেশ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সিস্টেম)।
আপনার নির্দিষ্ট এলাকার স্থানীয় অফিসে গিয়ে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিতে পারেন।